রবিবার, ২৫ মে ২০২৫, ১১:৫২ অপরাহ্ন

শিরোনাম:
ভুমি উন্নয়ন সেবা মানুষের দৌড় গোড়ায় পৌছে দিতে চাই – ইউএনও মোছাঃ রনি খাতুন শ্যামনগরে সৌদি প্রবাসীর স্ত্রীর উপর হামলার অভিযোগ অতি স্বচ্ছতার সাথে নতুনভাবে পূনঃ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির প্রকাশের আবেদন  নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়ে চাঁদাবাজি ভূয়া সাংবাদিক সহ আটক তিন শ্যামনগরের কলবাড়ি বাজারে বিএনপি নেতা বাপ্পির দখলবাজি, তিন দোকানে জোরপূর্বক তালা আমার ভীষণ মন খারাপ লাগছে — ইউএনও মোছাঃ রনি খাতুন বদলী হওয়ার পাঁচ মাসের মধ্যে সেই  জনস্বাস্থ্য উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ মফিজুর রহমান সদর উপ‌জেলায় যোগদান শ্যামনগরে খ্যাগড়াদানা কিশোর সংঘের উদ্যোগে ৪ দলীয় ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল অনুষ্ঠিত। দুর্নীতিতে সেরা  জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান এখনও বহাল তবিয়্যাতে শ্যামনগরের ইউএনওর হস্তক্ষেপে অবশেষে জনসাধারণ ফিরে এলো ঝাপার খালটি
এইমাত্র পাওয়া:
চোখ রাখুন

ঠাকুরগাঁওয়ে রাণীশংকৈলে মাল্টা ও কমলা চাষের দিকে ঝুঁকছেন চাষিরা !

মোঃ মজিবর রহমান শেখ,
Update Time : রবিবার, ২৫ মে ২০২৫, ১১:৫২ অপরাহ্ন

 

মোঃ মজিবর রহমান শেখ,

প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় দুলছে মালটা, কমলা, বাদামি লেবু। এ যেন এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। দেখলেই যেন চোখ জুড়িয়ে যায়। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ মাল্টা বাগান দেখতে আসছেন। এমনই দৃশ্য দেখা গেছে উত্তরের জনপদ ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল উপজেলার। কৃষক আমিরুল ইসলাম এক একর জমিতে ধানসহ বিভিন্ন ফসলাদি চাষাবাদ করতেন। কিন্তু হঠাৎ করেই তিনি অন্যান্য ফসল বাদ দিয়ে মাল্টা বাগানের জন্য গাছ রোপন করেন। হঠাৎ মাল্টা গাছ রোপনের কারণে গ্রামের লোকজন তাকে বিভিন্নভাবে কুটুক্তি করেন। বিভিন্ন ব্যাঁঙ্গ করে কথাবার্তাও বলেছেন।

কৃষক আমিরুল ইসলামের বাড়ী রানীশংকৈল উপজেলার হোসেনগাঁও ইউনিয়নের ক্ষুদ্র বাশঁবাড়ী গ্রামে। তিনি ঐ গ্রামেই তার নিজস্ব জমিতে প্রায় ২৭০টি মাল্টা গাছ রোপন করেছেন। আমিরুল ইসলাম জানান, গেল বছর থেকে ফলন আসা শুরু করেছে সে বছর লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করেছেন। এবারে ফলন প্রায় ১শ ৫০ মণ হতে পারে যা বাজারে প্রায় ৩ লাখ টাকায় বিক্রি করা যাবে বলে আশা করছেন। তিনি তার বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে বলেন, মাল্টা চাষবাদের শুরুটা বেশ কষ্টের ছিল। গাছ হবে মাল্টা হবে না,পরিশ্রম হবে, সফলতা পাবে না। আমিরুল পাগল হয়ে গেছে, এই মাটিতে মাল্টা হয় নাকি, সে এক সময় পোস্তাবে ইত্যাদি কথা শুনতে হয়েছে তাকে। আমিরুল ইসলাম বলেন, যখন মাল্টা ফলন দেওয়া শুরু হলো তখন লোকে বলে মাল্টা মিষ্টি হবে না। এমন অনেক কুটু কথা উপেক্ষা করে তিনি এখন গ্রামে সফল মাল্টা চাষী হিসাবে পরিচিত লাভ করেছেন। সবাই তাকে মাল্টা আমিরুল বলে সম্বোধন করছেন। আমিরুল ইসলাম জানান, রাণীশংকৈল উপজেলার সাবেক কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় দেবনাথ ও তার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনের উৎসাহ উদ্দীপনায় তিনি এ বাগান শুরু করেছিলেন। মাল্টার সব গাছ কৃষি অফিস থেকেই তাকে দেওয়া হয়েছিল বলে তিনি জানিয়েছেন।

আরেক কৃষক রাণীশংকৈল পৌর শহরের ভান্ডারা এলাকার জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, মাল্টা চাষের শুরুটা অনেক কুটুক্তি আর অসহ্যের ছিল। শুধু কুটুক্তির শিকার তিনি হননি। তার পরিবাররের লোকজনকেও স্থানীয়রা বিভিন্নভাবে ব্যাঙ্গঁ ও তুচ্ছ তাচ্ছিল্ল করে কথা বলেছেন। বর্তমানে তাদের মাল্টা বাগান ঘিরে স্থানীয়রা বেশ আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তাছাড়া বিভিন্ন এলাকার দর্শনার্থীরাও মাল্টা বাগান পরির্দশন করছেন। মাল্টা চাষী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, রাণীশংকৈল উপজেলার সাবেক কৃষি কর্মকর্তা (পদোন্নতি জনিত বদলি) সঞ্জয় দেবনাথের ব্যাপক উৎসাহ আর সহযোগিতায় তিনি এক একর জমিতে ৩৭০টি মাল্টা গাছ ৫ বছর আগে রোপন করেছেন। বর্তমানে ব্যাপক মাল্টা ফলন ধরেছে ২৬০০ টাকা মণে এ যাবত ১০০ মণ মাল্টা বিক্রি করেছেন। তিনি আশা করছেন এবারে প্রায় ৭ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করবেন। কৃষক আমিরুল ইসলাম ও জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মাল্টা চাষে তেমন ব্যায় নেই। নিয়মিত পরিচর্য্যা ও সময় মত বিভিন্ন রোগ দমনে কীটনাশক স্প্রে করলেই মাল্টা আবাদ করা যায়। রাণীশংকৈল উপজেলায় আমিরুল ইসলাম ও জাহাঙ্গীর আলমের মত অনেক কৃষক এখন মাল্টা চাষী হিসাবে পরিচিত লাভ করেছে। এদিকে রাণীশংকৈলের উৎপাদিত মাল্টা রাজধানী ঢাকা সহ আশপাশের অঞ্চলেও যাচ্ছে। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন বাজারে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে খুচরা বিক্রেতারা। খোলা বাজারের নিত্য পণ্যের মতই চটি বিছিয়ে মাল্টা বিক্রি হচ্ছে রাণীশংকৈল উপজেলার বিভিন্ন বাজারের অলিগলিতে। রাণীশংকৈল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ রানীশংকৈল উপজেলায় মোট ২৮ হেক্টর ৬ একর জমিতে ৪২০জন কৃষক মাল্টা চাষাবাদ করছেন। কৃষি অফিসের তথ্যমতে, এবারে রাণীশংকৈল উপজেলায় মোট ৫শ ১৩ মেট্রিক টন মাল্টা উৎপাদন হয়েছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকার মত। মাল্টা চাষে উৎসাহ প্রদানকারী তৎকালীন রানীশংকৈল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, বর্তমানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচার এন্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন এন্টারপ্রেনরশীপ এন্ড রেসিলিয়েন্স ইন বাংলাদেশ (পার্টনার) শীর্ষক প্রকল্পের দিনাজপুর অঞ্চলের সিনিয়র মনিটরিং কর্মকর্তা সঞ্জয় দেবনাথ বলেন, অনেক স্বপ্ন নিয়ে কৃষকদের মাল্টা চাষে উদ্বুদ্ধ করেছিলাম। মাল্টা চাষাবাদের জন্য কৃষকদের অনেক বুঝাতে হয়েছে। অনেকে একান্তই আমার উপর বিশ্বাস করে মাল্টা চাষাবাদ শুরু করে, যখন সফল হয়েছে। তখন অনেকেই মাল্টা চাষের আগ্রহ প্রকাশ করে। ঠিক এভাবেই রাণীশংকৈল উপজেলায় বর্তমানে ৪২০ জন মাল্টা চাষী রয়েছেন। তিনি বলেন, চাকরী জীবনের বড় প্রাপ্তি রাণীশংকৈল উপজেলায় মাল্টা চাষাবাদ করাতে পেরেছি। এখন রাণীশংকৈল মাল্টা চাষে সম্ভবনা দুয়ার উন্মোচন করেছে। রাণীশংকৈল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, এবারে ব্যাপক মাল্টার ফলন হয়েছে। আগামীতে এর থেকে আরো বেশি মাল্টা উৎপাদন হবে বলে প্রত্যাশা করছি। তিনি আরো বলেন, মাল্টা চাষীদের সার্বক্ষনিক উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে সব ধরনের পরার্মশ অব্যহত রয়েছে।