বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ০৮:৪৪ অপরাহ্ন
রিপোর্ট – ভয়েস অব সুন্দরবন ।।
সুপেয় পানির সংকটে শ্যামনগরের মানুষ এখন দিশেহারা। দৈনন্দিন একটি পরিবারে পানযোগ্য পানির যে পরিমাণ চাহিদা, অনেক পরিবারের পক্ষেই তা পুরোপুরি মেটানো মোটেই সম্ভব হচ্ছে না সাতক্ষীরার সুন্দরবন উপকূলীয় শ্যামনগর জনপদে।
৮ হাজার ৮৫০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা খরচ করে সুপেয় পানির প্রকল্প হাতে নেয় আওয়ামী সরকার। যেখানে অসহায়, গরীব আর পিছিয়ে পড়া মানুষকে স্বল্প মূল্যে নিরাপদ পানি দেওয়ার কথা ছিল। বরাদ্ধের হাজার হাজার কোটি টাকা অপচয় করে সরকারি কর্মকর্তা, এমপি ও দলীয় লোকজনই হয়েছেন লাভবান। সাতক্ষীরার শ্যামনগরে সুপেয় পানিসহ দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারযোগ্য পানির সংকট নতুন কিছু নয়। এই সংকট নিরসনে সরকার শত শত কোটি টাকা খরচ করলেও তার সুফল পাচ্ছে না প্রান্তিক জনগোষ্ঠী।
অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের একাধিক প্রকল্প শুধু টাকা খরচের মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। যে তিমিরে রয়েছে, সেই তিমিরেই থেকে যাচ্ছে সংকট। মাঝে কোটিপতি বনে যাচ্ছেন দুর্নীতির সিন্ডিকেটের সদস্যরা।
শ্যামনগরের সেই আলোচিত সেরা দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান এখন রয়েছেন বহাল তবিয়তে। বর্তমানে শ্যামনগরের সু দক্ষ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ রনি খাতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করে দুর্নীতি কমিয়ে পানির ট্যাংকি বিতরন করলেও থেকে নেই জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমানের দুর্নীতি।তিনি পানির ট্যাংকি বসানোর জন্য ইট, বালি ও সীমেন্ট সরাবরাহের ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম করে হাতিয়ে নিচ্চেন লক্ষ লক্ষ টাকা। তিন নম্বর ইট, তিন নম্বর ইটের খ” ও নিম্ন মানের সিমেন্ট দিচ্ছেন ট্যাংকি প্রাপ্ত মানুষদের।
সূত্র মতে, শ্যামনগর উপকূলীয় এলাকায় সুপেয় পানি সংকট নিরসনে ‘সমগ্রদেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্প’ ও ‘উপকূলীয় জেলাসমূহে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে পানি সরবরাহ’ নামে দুটি প্রকল্পের আওতায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে ৩ হাজার লিটারের পানি সংরক্ষণের ট্যাংক ও অন্যান্য সরঞ্জামাদিসহ স্থাপন করা হচ্ছে। এসব প্রকল্পের আওতায় সরকারের উপকারভোগী প্রতি ব্যয় প্রায় ৪২ হাজার ২০০ টাকা (ভ্যাট ট্যাক্সসহ)। তবে সরকারি বরাদ্দের এই পানির ট্যাংক বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের সহযোগিতায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের টেকনিশিয়ান দাবি করা ঠিকাদারের প্রতিনিধি নজরুল ইসলাম ও তার সহযোগীরা সমাজের বিত্তবান ও স্বচ্ছল চাকরীজীবীদের কাছে ১২ থেকে ১৭ হাজার টাকায় ফেরি করে বিক্রি করছেন এসব ট্যাংক। এই অনিয়মের সাথে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও জড়িত বলে অভিযোগ এলাকাবাসী।
ফলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ঠিকাদার প্রতিনিধির যোগসাজশে সরকারের কোটি কোটি টাকা তছরুপ হচ্ছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে শ্যামনগর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সাবেক সংসদ সদস্য ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে যে তালিকা পাওয়া গেছে সেই তালিকা অনুযায়ীই ট্যাংকি বিতরণ করা হচ্ছে। আমাদের দুর্নীতির কোন সুযোগ নেই।
তার সাথে সুরে সুর মিলিয়ে কাজের ঠিকাদার প্রতিনিধি নজরুল ইসলাম বলেন, অফিস থেকে যে তালিকা দেয়া হয়েছে, সেই তালিকা অনুযায়ী আমরা ট্যাংকি বিতরণ করছি। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, খাবার পানি সংকটে থাকা প্রকৃত অসহায় দরিদ্র মানুষের পরিবর্তে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বিত্তবান ও চাকরিজীবীদের মাঝে অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে পানির ট্যাংকি বিতরণ করা হয়েছে।
অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ের ট্যাংকি পাওয়া বিত্তবান ও চাকরিজীবীদের দাবি, তিন হাজার লিটারের একটি পানির ট্যাংক দোকানে কিনতে গেলে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা লাগে। কিন্তু ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে শুনে তাদের কাছ থেকে ক্রয় করেছেন তাঁরা। বঙ্গোপসাগরের সন্নিকটে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তবর্তী জেলা সাতক্ষীরার সর্বশেষ উপজেলা শ্যামনগর। সমুদ্রঘেঁষা হওয়ায় এই উপজেলার অধিকাংশ এলাকার পানি লবণাক্ত। তাই বসানো যায় না গভীর নলকূপও। বর্ষাকালে পানিতে লবণাক্ততা কম থাকলেও শুকনো মৌসুমে মানুষকে মারাত্মক কষ্ট পোহাতে হয়।
ইতিমধ্যে এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিডিয়ায় একাধিক তথ্য ভিত্তিক সংবাদ প্রকাশ হলেও শ্যামনগর জনপদের এখনও রয়েছেন তিনি বহাল তবিয়াতে।তবে একটি সুত্রে জানা গেছে, মোটা অংকের টাকা আর হরিনের মাংস দিয়ে উপর মহালকে ম্যানেজ করে এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান ওত পেতে বসে আছে এ জনপদে। এদিকে নতুন একটি ওয়াশ ব্লক নামের এক প্রকল্পের কাজের শুরুতে ঠিকাদারের সাথে সখ্যতা তৈরী অনিয়মের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকার কাজ করে যাচ্ছেন। শ্যামনগরের সচেতন মহল এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার দ্রুত অপসারণ দাবী করেছেন।
##