শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ১০:১৪ অপরাহ্ন
মুর্শিদাবাদ থেকে ফিরে এস কে সিরাজ।
জীবন্ত সমাধি দেয়া হয়েছিল তা ইতিহাস মনে রাখার প্রয়োজন মনে করেনি। তাই তার মৃত্যুর সঠিক সময়টি অজানাই রয়ে গেছে। এখন মুর্শিদাবাদের লালবাগের আজিমুন্নেসা বেগমের জীবন্ত সমাধি দর্শনে আসেন বহু মানুষ। তাদের চরণ স্পর্শে বেগমের মুক্তিলাভ ঘটেছে কিনা জানা নেই তবে তার জীবদ্দশায় তার করা কুকীর্তির কথা শুনে সকলেই মনে মনে শিহরিত হয়ে ওঠেন এটা এক বাক্যে বলা যায়।
সিঁড়ির নিচে সমাধি হলেও সেখানে আছে প্রশস্ত কক্ষ। ঐ কক্ষেই আজিমুন্নেসার সমাধি। কথিত আছে, সাধারণ মানুষের পদধূলিতে তার শিশু হত্যার পাপমোচনের জন্য মসজিদে ওঠার সিঁড়ির নিচে তাকে জীবন্ত সমাহিত করা হয়। আজিমুন্নেসার সমাধির উপরে আরো একটি সমাধি দেখতে পাওয়া যায়। তবে সেটি কার সমাধি তা কারো জানা নেই। অনেকেই বলেন, সমাধিটি সেই হাকিমের। আবার কারো মতে, বেগমের বিশ্বস্ত এক অনুচরের। আজিমুন্নিসার জীবন্ত কবর দেয়ার বিষয়ে ইতিহাসে নানা রকম ঘটনার প্রচলন রয়েছে।
জানা যায়, স্বামী থাকা সত্তেও প্রতি রাতে কোনো না কোনো সুপুরুষের সঙ্গে দৈহিক মিলনে লিপ্ত হতেন। যাতে এই কথা কেউ জানতে না পারে সেইজন্য দৈহিক মিলনের পর খাবারে বিষ প্রয়োগ করে প্রতিটি পুরুষকেই হত্যা করতেন। নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ, তার মেয়ের এই হত্যালীলার কথা জানতে পারেন। পরে এই স্থানে তার মেয়েকে জীবন্ত সমাধিস্থ করেন।
আজিমুন্নিসা অত্যন্ত স্বাধীনচেতা প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। তিনি পিতা মুর্শিদকুলি খাঁ এর মত একটি মসজিদ নির্মাণ করেন এবং সেই মসজিদের নিচেই নিজের সমাধি তৈরি করে রাখেন। পরবর্তীতে সেখানেই জীবন্ত সমাধি দেয়া হয় তাকে। আজিমুন্নিসা মনে করতেন তার সমাধির ওপরে পুণ্যবান মানুষের পায়ের ছাপ পড়লে তাদের চরণ স্পর্শে তার সমস্ত পাপ মুছে যাবে এবং তিনি মুক্তি লাভ করবেন। মৃত্যুর পরে সেখানেই তাকে সমাধিস্ত করা হয়। পরবর্তীতে যা ভূমিকম্পে প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়। আজিমুন্নিসা বেগম এর সমাধির উপরে আরো একটি সমাধি দেখতে পাওয়া যায়।
তবে এই সমাধিটি আসলে কার সেটি সঠিকভাবে জানা যায়নি। কেউ কেউ বলেন, সমাধিটি সেই হাকিমের আবার কেউ কেউ বলেন, সমাধিটি বেগমের বিশ্বস্ত এক অনুচরের। ২৮৫ বছর আগের ঘটা ঘটনার অমীমাংসিত রহস্য আজো মুর্শিদাবাদের আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়ায়।
আজিমুন্নিসা বেগমের মসজিদটি প্রবল ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে যায়, তবে এর কারুকার্য করা একটি দেওয়াল এখনো বর্তমান। এই মসজিদটির সঙ্গে মুর্শিদকুলি খাঁ’র নির্মিত কাটরা মসজিদ এর অনেক মিল পাওয়া যায়। অন্য একটি মত থেকে পাওয়া যায়, আজিমুন্নিসা কাটরা মসজিদের অনুকরণে একটি ছোট মসজিদ এখানে নির্মাণ করেন।
১৯৮৫ সালে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগ এই ভগ্নপ্রায় মসজিদটির রক্ষণাবেক্ষণ করে সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেয়। নবাব কন্যা আজিমুন্নেসার জীবন্ত কবর দেখতে এরপর থেকে আজও মানুষের ভিড় লেগেই থাকে সমাধিস্থলে। আজিমুন্নেসার জীবন্ত কবরের প্রচলিত কাহিনী শুনে সবাই শিহরিত হয়ে ওঠেন।
##