শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ১২:৫৭ পূর্বাহ্ন
মোঃ রুহুল আমিন রাজু জামালপুরঃ
জামালপুরে সিকদার গ্রুপের মতিয়ার পাওয়ার প্যাক কোম্পানীর ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র (পাওয়ার প্লান্ট) গত ৫ সেপ্টেম্বর ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতরা নিরাপত্তা কর্মী ও প্লান্টের ভিতরে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হাত-পা বেঁধে কয়েক কোটি টাকার মূল্যবান মালামাল লুট করে নিয়ে যায় বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে তথ্য দেন কর্তৃপক্ষ। তবে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা থাকার পরেও পাওয়ার প্ল্যান্টে এমন ডাকাতির ঘটনায় সচেতন মহলে এখন নানান প্রশ্নের সঞ্চার ঘটছে ।
সিকদার গ্রুপ পারিবারিক মালিকানাধীন একটি বাংলাদেশী ব্যবসায়িক গোষ্ঠী। ১৯৫০ এর দশকের গোড়ার দিকে এর প্রতিষ্ঠা করেন জয়নুল হক সিকদার। বিগত ২০২১ সালে জয়নুল হক সিকদারের মৃত্যুর পর এই গ্রুপের পরিচালক হন তার ছেলে রিক হক সিকদার ও রন হক সিকদার।
জামালপুরে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত শিকদার গ্রুপের ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কেন্দ্র পাওয়ার প্যাক মতিয়ারায় ২০১৬ সালের ২৭ নভেম্বর বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালের ১ মার্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি উদ্বোধন করেন। জ্বালানি সংকটে গত ২০২২ সালে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। উৎপাদন বন্ধ থাকলেও পাওয়ার প্লানটিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল খুবই জোড়ালো। পাকা দেয়াল, কাঁটাতারের বেড়া, সিসিটিভি ক্যামেরা ও নিরাপত্তাকর্মীর কড়া পাহারা থাকতো সর্বদা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পাওয়ার প্লান্ট এলাকায় প্রবেশ করতে প্রথম ধাপে পকেট গেটে আনসার সদস্যদের কাছে নিজের পরিচয় প্রদান করতে হয়।এরপর আনসার সদস্যরা প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে।
এখানেই শেষ নয়, আগত ব্যক্তির পরিচয় পাওয়ার পর সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে তাকে সনাক্ত করার পর কর্মকর্তারা ওই ব্যক্তিকে তাদের সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশের অনুমতি দেন। অনুমতি পেয়ে আগত ব্যক্তি তার নাম ঠিকানাসহ যাবতীয় পরিতিচি খাতায় লিপিবদ্ধ করে গেটের ভিতরে প্রবেশ করেন। এরপর আগত ব্যক্তির গতিবিধি ২৭ টি সিসিটিভি ক্যামেরা দ্বারা পর্যবেক্ষণ করেন সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
ডাকাতির ঘটনার পর প্ল্যান্টের ম্যানেজার আলমগীর হোসেন বিভিন্ন গণমাধ্যমকে জানান, জামালপুর পৌরসভার শাহপুরে অবস্থিত শিকদার গ্রুপের ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র মতিয়ারা পাওয়ার প্ল্যান্টে গত বুধবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৭টার দিকে একদল দুর্বৃত্ত প্রবেশ করে। পরে অস্ত্রের মুখে নিরাপত্তার দায়িত্বে আনসার সদস্যদের হাত-পা বেঁধে ফেলে। এরপর প্ল্যান্টে কর্মরত প্রকৌশলী ও অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীকেও অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে একটি ভবনে আটকে রেখে রাতভর লুটপাট চালায় ডাকাতরা। প্ল্যান্টের ভেতরে থাকা কয়েকটি কনটেইনার থেকে মূল্যবান কেবল ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ, সিসি ক্যামেরার ড্রাইভ, কম্পিউটার ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে ডাকাতরা।
জেলার সচেতন মহল মনে করেন, এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে কয়েকস্তরের নিরাপত্তা বলয় পেরিয়ে সন্ধ্যা থেকেই ডাকাতি অনেকটা রুপকার গল্পের মতো। জামালপুর-শেরপুর মহাসড়ক সংলগ্ন এমন জায়গায় কি করে ডাকতরা গেট দিয়ে প্রবেশ করলো? শুধু তাই নয়, আধুনিক এ যুগে ২২ জন নিরাপত্তা কর্মীর কেউ তাদের কর্মকর্তা কিংবা পুলিশের সাথে যোগাযোগ করেনি কেন?
এমন প্রশ্নের উত্তরে এই দুর্ধষ ডাকাতির সাথে ওই প্রতিষ্ঠানের কারো সংশ্লিষ্টতা কিংবা গভীর চক্রান্তের গন্ধ চলে আসে।
পরবর্তীতে এই ডাকাতির বিষয়ে মতিয়ার পাওয়ার প্যাকের কর্মচারী ও নিরাপত্তাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে কর্তৃপক্ষ প্রতিবেদককে অনুমতি প্রদান করেননি।
তবে প্ল্যান্টের ম্যানেজার আলমগীর হোসেন প্রতিবেককে জানান, খাতায় এন্টি করে সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশ করতে হয় এটাই নিয়ম। তিনি আরও জানান, সেদিন গভমেন্টের নির্দেশে আনসার সদস্যরা সিভিলে ডিউটি করছিলো।
এ বিষয়ে জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়সাল আতিক জানান, ইতিমধ্যে কয়েকজনকে সনাক্ত করা হয়েছে। আরো গভীরভাবে তদন্ত করে খুব দ্রুত তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।
এ বিষয়ে জামালপুর জেলার পুলিশ সুপার সৈয়দ রফিকুল ইসলাম পিপিএম জানান, ডাকাতির ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে এবং সেই মামলার তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধরণা করা হচ্ছে এ ডাকাতির সাথে জেলা এবং জেলার বাইরের ডাকাত চক্রের হাত রয়েছে। তবে যে বা যারাই এ ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত থাকুক প্রত্যেককেই আইনের আওতায় আনা হবে।