সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৩৮ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম:
গুরুতর অসুস্থ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা স্বেচ্ছাসেবক দলের দোয়া মাহফিল। তারনীপুর, ভেটখালী এলাকার পানি নিষ্কাষনের জন্য ঝুরঝুরি ও হীমখালী খালের সংযোগ স্থলে কালভার্ট নির্মানের জন্য মানববন্ধন অনুষ্ঠিত। বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় শ্যামনগর উপজেলা যুবদলের দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত তারনীপুর–ভেটখালী এলাকায় পানি নিষ্কাশনের ও কালভার্ট দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত শ্যামনগরে কিশোরীর জলবায়ু সহনশীল ভবিষ্যৎ প্রকল্পে SRHR অ্যাক্সেস নিশ্চিতকরণে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে  শ্যামনগর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবী এসোসিয়েশনের কমিটি গঠন- সভাপতি সাইফুদ্দিন, সম্পাদক নাঈম শ্যামনগরে জাতীয় প্রানি সম্পদ সপ্তাহ ২০২৫ উপলক্ষে প্রানি সম্পদ প্রদর্দশনীয় অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে  যাদবপুর উত্তর ফুলবাড়িয়া সিদ্দিকিয়া দাখিল মাদ্রাসায় শিক্ষক ও অফিস সহকারীর বিদায় অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত সাতক্ষীরা-৪ আসনে মনোনয়নের দাবিতে সাবেক উপজেলা বিএনপির সভাপতি বর্ষিয়ন জননেতা মাষ্টার আব্দুল ওয়াহেদের সমর্থনে ধারা বাহিক ভাবে চলছে বিক্ষোভ সমাবেশ , শ্যামনগরে সাতক্ষীরা-ভেটখালী মহাসড়ক ৩৪ ফুট প্রশস্ত করার দাবিতে মানববন্ধন
এইমাত্র পাওয়া:
চোখ রাখুন

চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের দীর্ঘ আন্দোলনের ফসল : একনেকে অনুমোদিত নতুন কালুরঘাট সেতু

স ম জিয়াউর রহমান
Update Time : সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৩৮ পূর্বাহ্ন

 

 

স ম জিয়াউর রহমান

 

 

চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের দীর্ঘ দিনের আন্দোলন ও প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ অবশেষে নতুন কালুরঘাট সেতু নির্মাণের প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে। এই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের পেছনে ফোরামের অব্যাহত সচেতনতা বৃদ্ধি ও আন্দোলন ছিল মূল চালিকা শক্তি, যা চট্টগ্রামের জনগণের দীর্ঘদিনের চাহিদা পূরণে অবদান রেখেছে। নাগরিক ফোরামের সংগ্রাম ও ত্যাগ চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম একাধিক বছর ধরে চট্টগ্রামকে আধুনিক ও পরিকল্পিত নগরীতে পরিণত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান চেয়ে আসছে। কালুরঘাট সেতুর অব্যবস্থা ও দীর্ঘদিনের জীর্ণ অবস্থার কারণে চট্টগ্রামের জনগণ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছিলেন। নাগরিক ফোরামের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন এবং মহাসচিব মোঃ কামাল উদ্দিন চট্টগ্রামের জনগণের পক্ষে বারবার দাবি তুলেছেন—চট্টগ্রামের উন্নয়নে এই সেতুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ফোরাম শুরু থেকেই বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে ছিল স্বারকলিপি প্রদান, জনসচেতনতা বৃদ্ধি, সংবাদ সম্মেলন এবং আলোচনা সভা আয়োজন। মে ও জুন মাসে একাধিকবার চট্টগ্রামের জনগণের স্বার্থে ফোরাম প্রয়োজনীয় দাবিসমূহ তুলে ধরেছে। এমনকি অনেকেই মনে করতেন অন্তর্বর্তী সরকার এই ধরনের প্রকল্প অনুমোদন করবে না, কিন্তু চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের নেতৃবৃন্দ আশা হারাননি। তাঁরা জানতেন যে জনগণের স্বার্থে আন্দোলন একদিন সফল হবে।

ষড়যন্ত্রের প্রতিবন্ধকতা ও ফোরামের প্রতিশ্রুতি

নাগরিক ফোরাম একটি বিষয় স্পষ্ট করেছে—এ সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে অনেক বাধা এসেছে এবং কিছু ব্যক্তি এই প্রকল্পটি থামানোর জন্য ষড়যন্ত্র করেছেন। কিন্তু ফোরাম কখনও নিজেদের প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসেনি। চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের নেতৃত্বে একাধিক সভা ও সমাবেশের মাধ্যমে তাঁরা জনগণের মধ্যে স্বপ্নকে জাগিয়ে রেখেছেন। এর সাথে সাথে, গত সেপ্টেম্বর মাসে চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম একটি বড় সভা আয়োজন করে যেখানে সেতুর নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা ও সম্ভাব্য সুবিধাসমূহ তুলে ধরা হয়। এরপর তাঁরা একনেকের কাছে পূনরায় স্বারকলিপি জমা দেন।

সেতুর গুরুত্ব ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এই সেতু নির্মাণের প্রস্তাবনা চট্টগ্রামের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। বর্তমান সেতুর জীর্ণ দশা এবং যানজটের কারণে চট্টগ্রামের মানুষ প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। নতুন সেতুটি নির্মাণের মাধ্যমে চট্টগ্রামের যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে এক বিশাল পরিবর্তন আসবে। এটি কেবল চট্টগ্রামের জনগণের ভোগান্তি লাঘব করবে না, বরং এর সাথে চট্টগ্রামের সামগ্রিক উন্নয়নেও সহায়তা করবে। নাগরিক ফোরামের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “এই সেতু চট্টগ্রামের পরিকল্পিত নগরায়ণ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।” নাগরিক ফোরাম আশা প্রকাশ করেছে যে, এই সেতুর কাজ দ্রুততম সময়ের মধ্যে শুরু হবে এবং ২০২৮ সালের মধ্যে এটি সম্পন্ন হবে। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য একনেকের প্রতি এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে নাগরিক ফোরাম অনুরোধ করেছে যেন কোনো বিলম্ব না করে কাজের সূচনা করা হয়।

জনগণের জন্য অঙ্গীকার ও ধন্যবাদ। একনেকের অনুমোদনের পর, ফোরাম একটি বিবৃতিতে একনেকের সদস্যবৃন্দ এবং যারা প্রকল্পের পেছনে থেকে কাজ করেছেন তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছে। বিশেষ করে ফোরাম চট্টগ্রামের রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক, মিডিয়া এবং সেই সমস্ত সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে, যারা শুরু থেকে এই আন্দোলনে সোচ্চার ছিলেন এবং সমর্থন দিয়ে গেছেন।

চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন বলেন, “এই সেতু কেবলমাত্র একটি অবকাঠামো নয়, এটি চট্টগ্রামের ভবিষ্যতের জন্য একটি প্রতীক হয়ে থাকবে। এই আন্দোলনে যারা অংশগ্রহণ করেছেন, তাঁদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা। আমরা এই সেতু সম্পূর্ণ হওয়ার সাথে সাথে চট্টগ্রামের জনগণকে এক নতুন সূচনা উপহার দিতে চাই।” এই প্রকল্পের সাফল্য নাগরিক ফোরামের দীর্ঘদিনের সংগ্রাম ও অবিচল আন্দোলনের সাক্ষী। তাঁরা অনুরোধ করেছেন যে চট্টগ্রামের উন্নয়নের এ ধরনের বৃহৎ প্রকল্পের কাজে আরও মনোযোগ দেওয়া হোক এবং কালবিলম্ব না করে দ্রুত কাজ শুরু করা হোক। চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম দৃঢ়প্রত্যয়ী যে, এই সেতু নির্মাণ চট্টগ্রামবাসীর জীবনযাত্রাকে আরও সমৃদ্ধ করবে এবং শহরটিকে পরিকল্পিত নগরায়ণের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন ও মহাসচিব মো. কামাল উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে কালুরঘাট সেতু নির্মাণের দাবিতে আপোষহীনভাবে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে ১৯৯০ সালে মনোয়ার হোসেন ও জামাল উদ্দিনের নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো এই আন্দোলনের সূচনা হয়। এরপর থেকে কামাল উদ্দিন এই দাবিতে নিয়মিত সোচ্চার থেকে কাজ করেছেন, যার মধ্যে অসংখ্য লেখা ও বিশ্লেষণধর্মী নিবন্ধও প্রকাশিত হয়েছে। ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম প্রতিষ্ঠার পর থেকে তারা ধারাবাহিকভাবে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন জোরদার করেছেন। কালুরঘাট সেতুর দাবিতে ফোরামের পক্ষ থেকে অসংখ্য মানববন্ধন, গণ-অনশন, প্রতিবাদী সমাবেশ এবং সরকারের কাছে স্মারকলিপি প্রদানসহ নানা কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে। জনমত গঠনে মিছিল-মিটিং, পোস্টার ও ব্যানারের প্রচার কর্মসূচি অব্যাহত রাখা হয়েছে।

 

চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের নেতৃত্বে ২০২০ সালে ঢাকায় একটি জাতীয় সংবাদ সম্মেলনে কালুরঘাট সেতু নির্মাণের জন্য বিশেষ প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। এই সম্মেলনে বোয়ালখালীর সংসদ সদস্য মঈন উদ্দিন খান উপস্থিত ছিলেন এবং সরকারকে স্পষ্টভাবে কালুরঘাট সেতুর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। পরে তিনি জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন এবং সরকারকে ডিসেম্বরের মধ্যে সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিতে বলেন। তিনি সরকারের কাছে সতর্কবাণী দেন, সেই সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত না হলে সংসদ সদস্যের পদত্যাগ করবেন। দুর্ভাগ্যবশত : তিনি আজ আর আমাদের মাঝে নেই, তবে তার অবদানের কথা চট্টগ্রামবাসী আজীবন মনে রাখবে।

 

চট্টগ্রামের মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল সরকার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস, যিনি ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা থাকাকালে চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বাজেট একনেকে অনুমোদন দিয়েছিলেন এবং পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকারের মাধ্যমে বিমানবন্দরটি বাস্তবায়িত হয়। তিনি যদি সেই সময়ে একনেকে অনুমোদন না দিতেন, তাহলে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর হয়তো বাস্তবায়িত হতো না। আজ তিনি প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে কালুরঘাট সেতুর জন্য একনেকে অনুমোদন দিয়েছেন, যা চট্টগ্রামবাসীর জন্য অত্যন্ত কৃতজ্ঞতার বিষয়।

 

ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন ও কামাল উদ্দিন বলেন, আমাদের আন্দোলন এখানেই শেষ নয়। সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা সোচ্চার থাকবো। নাগরিক ফোরামের পক্ষ থেকে শুরু করা এই আন্দোলন, পত্রিকায় লেখা থাক বা না থাক, চট্টগ্রামের জনগণ এবং বোয়ালখালীর বাসিন্দারা এই অবদান চিরকাল মনে রাখবে।