শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ০২:৩১ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম:
অতি স্বচ্ছতার সাথে নতুনভাবে পূনঃ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির প্রকাশের আবেদন  নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়ে চাঁদাবাজি ভূয়া সাংবাদিক সহ আটক তিন শ্যামনগরের কলবাড়ি বাজারে বিএনপি নেতা বাপ্পির দখলবাজি, তিন দোকানে জোরপূর্বক তালা আমার ভীষণ মন খারাপ লাগছে — ইউএনও মোছাঃ রনি খাতুন বদলী হওয়ার পাঁচ মাসের মধ্যে সেই  জনস্বাস্থ্য উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ মফিজুর রহমান সদর উপ‌জেলায় যোগদান শ্যামনগরে খ্যাগড়াদানা কিশোর সংঘের উদ্যোগে ৪ দলীয় ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল অনুষ্ঠিত। দুর্নীতিতে সেরা  জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান এখনও বহাল তবিয়্যাতে শ্যামনগরের ইউএনওর হস্তক্ষেপে অবশেষে জনসাধারণ ফিরে এলো ঝাপার খালটি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের লিগ্যাল এইড কমিটির সদস্য হলেন সাবেক ছাত্রদলনেতা  এড. মাসুদুল আলম দোহা শ্যামনগরে ছাত্রদল নেতা কাইয়ুমের নামে মিথ্যা সংবাদের প্রতিবাদে মানববন্ধন
এইমাত্র পাওয়া:
চোখ রাখুন

চট্টগ্রামে চাঞ্চল্যকর কোকেন মামলা : অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে সুবিচার দাবিখান জাহান আলী পরিবারের 

স ম জিয়াউর রহমান
Update Time : শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ০২:৩১ পূর্বাহ্ন

 

 

 

স ম জিয়াউর রহমান, চট্টগ্রাম থেকে :

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের বনেদি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খানজাহান আলী গ্রুপের চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ ও তার ভাই মোস্তাক আহমদকে চাঞ্চল্যকর কোকেন উদ্ধার মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়েছিলেন র‌্যাবের সাবেক ডিজি বেনজীর আহমেদ, সাবেক এডিজি কর্নেল জিয়াউল আহসানসহ প্রশাসনের চার শীর্ষ কর্মকর্তার সিন্ডিকেট। তাদের চাহিদা মতো ৫ কোটি টাকা ঘুস না দেওয়ায় তাদেরকে এ মামলায় ফাঁসানো হয়েছিল। এর আগে তাদের ক্রসফায়ারেরও হুমকি দেওয়া হয়েছিল। ওই ঘটনার দীর্ঘ প্রায় ৯ বছর পর দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবরে লিখিতভাবে এসব অভিযোগ এনে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন নুর মোহাম্মদের ছেলে মোহাম্মদ নিবরাস।

গত ৯ সেপ্টেম্বর দেওয়া চিঠিতে র‌্যাবের তৎকালীন ডিআইজি বেনজীর আহমেদ, সাবেক এডিজি কর্নেল জিয়াউল আহসান, র‌্যাব-৭ চট্টগ্রামের তৎকালীন সিইও লে. কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমদ ও এএসপি মহিউদ্দিন ফারুকীকে অভিযুক্ত করা হয়।

চট্টগ্রাম মহানগরের সাবেক পিপি ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ফখরুদ্দিন চৌধুরীও ৫০ লাখ টাকা ঘুস দাবি করেছিলেন বলে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। প্রশাসনের চার শীর্ষ কর্মকর্তার সিন্ডিকেটের তৎপরতার কারণে এক বছর ৬ মাস কারাবাসের পর জামিন নিয়ে হয়রানির ভয়ে দেশান্তরী হয়েছিলেন নুর মোহাম্মদ। একই কারণে তার ভাই মোস্তাক আহমদও দেশে ফিরতে পারছেন না। এসব বিষয়ে এতদিন মুখ খুলতে না পারলেও নুর মোহাম্মদের পরিবার ঘুষ দাবির গুরুতর অভিযোগের বিষয়ে এবার মুখ খুলেছে।

মোহাম্মদ নিবরাস মালয়েশিয়ার ইউনিরাজাক ইউনিভার্সিটিতে থেকে এমবিএ শেষ করে দেশে এসে বাবার ধ্বংস হয়ে যাওয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর হাল ধরার চেষ্টা করছেন।

দুদক চেয়ারম্যানের কাছে চিঠিতে নিবরাস বলেছেন, মামলা তদন্তকালীন আমাদের পরিবার থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করা হয়। উদ্দেশ্যমূলকভাবে মামলায় হয়রানি থেকে পরিত্রাণের জন্য সহযোগিতা কামনা করা হয়। কিন্তু কোনো দপ্তরই আমাদের সহযোগিতা করেনি। বরং আমাদের র‌্যাব কার্যালয়ে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে র‌্যাব কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে জানা যায়, মামলাটি র‌্যাবের ডিজি বেনজীর আহমেদ ও এডিজি কর্নেল জিয়াউল আহসান তদারকি করছেন। র‌্যাবের ডিজি বেনজীর আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ৫ কোটি টাকা ঘুষ দাবি করে বসেন।

প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে আমাদের পরিবার। টাকা না দিলে ক্রসফায়ারেরও হুমকি দেওয়া হয়। কোনো কিছুতেই আমার বাবা রাজি বা নিবৃত্ত হননি। মূলত এ কারণেই কোকেন চালান আনার ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কোনো ধরনের প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও কেবল ‘অনুমান’ ও ‘প্রতীয়মান হওয়ার ভিত্তিতে র‌্যাব এই মামলায় সম্পূরক চার্জশিটে আমার বাবা ও চাচাকে আসামি করে। যার খেসারত ৯ বছর ধরে দিতে হচ্ছে আমাদের পরিবারকে।’

দুদকে চিঠি দেওয়ার কথা নিশ্চিত করে নিবরাস বলেন, “আমার বাবার ব্যবসা ছিল। হ্যাচারি ব্যবসা তথা চিংড়ি রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতেন। ছিল নিটিং ব্যবসা। কাজ করত হাজার হাজার কর্মকর্তা- কর্মচারী। কিন্তু দীর্ঘ ৯ বছর বাবার অনুপস্থিতির কারণে সব ব্যবসা ধ্বংসের পথে।

শুধু আমাদের একটি পরিবার নয়; প্রশাসনের এমন ভয়ংকর অভিলাষের কারণে আমাদের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা শত-সহস্র কর্মকর্তা-কর্মচারীর পরিবারও কষ্টে পড়েছে। আমি অন্তর্বতী সরকারের কাছে এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও ও জড়িদের শাস্তি দাবি করছি। যাতে আর কোনো ব্যবসায়ী এভাবে হয়রানির শিকার না হন। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ৭ জুন চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি ইয়ার্ডে সন্দেহজনক চালানের একটি কনটেইনার জব্দ করা হয়। এতে ১০৭টি প্লাস্টিকের ড্রামভর্তি সানফ্লাওয়ার তেল পাওয়া যায়। এ তেলের মধ্যে মিশিয়ে কোকেন আনা হয়েছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তথ্য ছিল। রাসায়নিক পরীক্ষায় তেলে কোকেনের অস্তিত্ব রয়েছে বলে রিপোর্ট আসে। এ ঘটনায় বন্দর থানায় মামলা করে পুলিশ। এতে খানজাহান আলী গ্রুপে অঙ্গপ্রতিষ্ঠান প্রাইম শ্রিম্প হ্যাচারির ম্যানেজার গোলাম মোস্তফা সোহেল ও গ্রুপের চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মোহাম্মদ কামরুজ্জামান মামলাটি তদন্ত করেন।

দীর্ঘ তদন্ত শেষে ৮ জনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। আদালত চার্জশিট গ্রহণ না করে মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন র‌্যাবকে। নির্দেশ পাওয়ার পর র‌্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ এ মামলার তদন্তের জন্য তারই ঘনিষ্ঠ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন ফারুকীকে তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত করেন। দায়িত্ব পাওয়ার পর ২০১৬ সালের ১৪ জানুয়ারি তদন্তে সহায়তার কথা বলে ডেকে নিয়ে নুর মোহাম্মদকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠান পরবর্তীতে এ মামলার পূর্ববর্তী চার্জশিটে থাকা ৮ জনের পাশাপাশি নুর মোহাম্মদ ও তার ভাই মোশতাক আহমেদকে আসামি করে ১০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে সম্পূরক চার্জশিট জমা দেন। মামলাটি বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগর ৪র্থ অতিরিক্ত দায়রা জজ শরীফুল আলম ভূঁইয়ার আদালতে বিচারাধীন আছে।

সাবেক চট্টগ্রাম মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার বলেন, ‘আলোচ্য মামলার চার্জশিটে অনেক ত্রুটি রয়েছে।

একটি স্পর্শকতার মামলায় কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়া কেবল অনুমান বা প্রতীয়মান হওয়ার অজুহাতে দুই ভাইকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার ঘটনাটি ছিল উদ্দেশ্যমূলক।