শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ১২:২৬ অপরাহ্ন
মোঃ পলাশ শেখ
বিশেষ প্রতিনিধি
শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় হাজিরা বোনাস বৃদ্ধিসহ শ্রমিকদের ১৮ দফা দাবি পূরণের যৌথ ঘোষণায় তৈরী পোশাক শিল্পে স্বস্তি ফিরে আসায় অধিকাংশ কারখানায় শান্তিপুর্নভাবে উৎপাদন চলছিলো। এরমধ্যেও ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক দুই সংসদ সদস্যের মালিকানাধীন দুটি কারখানাসহ ১৯টি কারখানা এখনও বন্ধ রয়েছে।
রবিবার এসব বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়াসহ বিভিন্ন দাবি আদায়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে তৈরি পোশাক শ্রমিকরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শিল্পাঞ্চলের টঙ্গাবাড়ী, জিরাবো, কাঠগড়া, পুকুরপাড়, ও জামগড়া এলাকার অন্তত ৪০ কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া আশুলিয়ার পলাশবাড়ি ও কাঠগড়া এলাকায় শ্রমিকদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে অন্তত ১৫ শ্রমিক আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে ৭ জনকে আটকসহ কারখানাগুলোর সামনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে যৌথবাহিনী।
আশুলিয়ার টঙ্গাবাড়ী মাদবর বাড়ি এলাকায় ‘কাজ নেই, বেতন নেই’ শ্রম আইনের ১৩(১) ধারার বন্ধ রয়েছে সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মোমিন মন্ডলের মালিকানাধীন মন্ডল গ্রুপের প্রতিষ্ঠান মন্ডল নৗটওয়্যার লিমিটেড। এছাড়া জামগড়া এলাকায় খুলনা-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর মালিকানাধীন এনভয় গ্রুপে গ্রুপের কারখানাও বন্ধ রাখা হয়েছে। সকালে কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে কারখানাটির শ্রমিকরা সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে রাস্তায় বের হলে শিল্পাঞ্চলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে দ্রুত যৌথ বাহিনী মোতায়েন করা হয়।
সরেজমিনে টঙ্গাবাড়ী মাদবর বাড়ি এলাকার মন্ডল নীটওয়্যার লিমিটেড কারখানার সামনে গিয়ে দেখা যায়, কারখানাটির মূল ফটকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নোটিশ টাঙ্গানো রয়েছে। সকাল ৯ টার দিকে জিরাবো এলাকা থেকে শ্রমিকদের বিশাল একটি মিছিল এসে মন্ডল নীটওয়্যারের সামনে সড়ক অবরোধ করে অবস্থান নেয়। এসময় বিক্ষোদ্ধ শ্রমিকরা পাশ্ববর্তী ম্যাঙ্গো টেক্স কারখানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে নিরাপত্তার সার্থে কারখানাটিতে ছুটি ঘোষনা করে মালিকপক্ষ। এরপরও শ্রমিকরা দুই শ্রমিককে গুম করার অভিযোগ তুলে তাদের ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কের টঙ্গাবাড়ি এলাকায় প্রায় ৪ ঘন্টা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে এবং কারখানায় ভাংচুর চালায়। অব্যাহত শ্রমিক বিক্ষোভের মাঝে নিখোঁজ দাবি করা নারী শ্রমিক আয়শা আক্তারকে কারখানার সামনে হাজির করা হলে সে ভয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় পিএমকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এঘটনায় শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে কারখানায় ভাংচুর চালালে পুলিশ, এপিবিএন, র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তাদেরকে সড়িয়ে দেয়।
বিক্ষোদ্ধ শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, কর্তৃপক্ষ আমাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে কারখানা অনিদৃষ্টকালের জন্য বন্ধ রেখেছে। এর মাঝে ভবন মালিক রাজীব ও তার ভাই সজিব শ্রমিকদের বিভিন্নভাবে হুমকিধানকি দিয়ে আসছেন। দাবি আদায়ে আন্দোলন করায় কারখানার পিসি কমিটির সদস্য আয়শা আক্তার ও রুবেল নামে দুই শ্রমিককে মারধর করে আটকে রাখার অভিযোগ করেন। এছাড়া এলাকায় মাইকিং করে শ্রমিকদের বাসা বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেয়া হয়েছে জানিয়ে তাদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন শ্রমিকরা।
এদিকে জিরাবো পুকুরপার এলাকার লুসাকা গ্রুপের শ্রমিকরা বিভিন্ন কারকানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে আসপাশের কারখানাগুলোতে ছুটি ঘোষনা করে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া কাঠগড়া এলাকার এ.আর জিন্স কারখানায় শান্তিপূর্নভাবে কাজ চলার সময় পাশ্ববর্তী ক্রসঅয়ার লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা সেখানে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। উত্তেজিত শ্রমিকরা কারখানাটির মূল ফটক ভাংচুর, মেইন্টেনেন্স শাখা, গাড়ি ওয়াশ শাখা ও মসজিদের পাশের সেডসহ ৪ জায়গায় অগ্নিসংযোগ করে। এসময় বেশ কয়েজন শ্রমিক আহত হয়। পরে খবর পেয়ে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌছে বিক্ষোদ্ধ শ্রকিদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় এবং ঘটনাস্থল থেকে ৭ জনকে আটক করেন।
আশুলিয়া শিল্প পুলিশ ১ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম জানান, ‘কাজ নেই, বেতন নেই’ শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় ১১টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে এবং ৭টি কারকানায় সাধারন ছুটি ঘোষনা করা হয়েছে। এছাড়া কয়েকটি জায়গায় শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও ভাংচুর করায় বাইপাইল আব্দুল্লাহপুর সড়কের জামগড়া, টঙ্গাবাড়ি ও বিশমাইল জিরাবো সড়কের কাঠগড়া ও পুকুরপার এলাকার অধিকাংশ কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে শিল্প পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও এপিবিএনসহ সেনাবাহিনীর সদস্য মোতায়ের রয়েছে বলেও জানান তিনি।